পার্থেনোজেনেসিস নিয়ে সমকামীদের ভন্ডামি জানুন
লিখেছেন লিখেছেন শাফিউর রহমান ফারাবী ০২ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১১:২৪:৫৯ রাত
Parthenogenesis/পার্থেনোজেনেসিস হল এমন একটি অযৌণ প্রজনন যার জন্য কোন পুরুষ সঙ্গীর প্রয়োজন হয় না। প্রাণিজগতের ভিতরে মাছ, ব্যাঙ, সরীসৃপ ও পাখিসহ এরকম মোট ৭০ টি প্রজাতি আছে যে প্রজাতীর স্ত্রীরা কোন পুরুষ সঙ্গীর সাহায্য ছাড়াই অর্থ্যাৎ কোন পুরুষ দ্বারা তাদের ডিম্বানু নিষিক্ত করা ছাড়াই তারা বংশ বিস্তার করতে পারে। আমাদের মানব জাতীর ভিতরে কোন মেয়ে সন্তান ধারন করার জন্য অবশ্যই ঐ মেয়ের ডিম্বানু কোন পুরুষের শুক্রানো দ্বারা নিষিক্ত হতে হবে। কোন পুরুষের শুক্রানো ছাড়া কখনই কোন মেয়ের ডিম্বানু নিষিক্ত হতে পারবে না। কিন্তু প্রাণিজগতের ভিতরে হুইপটেল গিরগিটি থেকে শুরু করে মৌমাছি, কমোডো ড্রাগন, আঁশ পোকা এরকম প্রায় ৭০ টি প্রজাতি আছে যেইসব প্রজাতির ভিতরে Parthenogenesis/পার্থেনোজেনেসিস এর মত একটি অযৌণ প্রজনন ঘটে থাকে। এই সব প্রজাতির স্ত্রীলিঙ্গ গুলি নিজেরাই কোন পুরুষ সঙ্গীর সাহায্য ছাড়াই তাদের বাচ্চা জন্ম দিতে পারে। সেইক্ষেত্রে তাদের ডিম্বানুর কোন নিষেক না ঘটে সরাসরী ভ্রনে পরিনত হয়। সাধারনত পার্থেনোজেনেসিস প্রক্রিয়ায় স্ত্রী লিঙ্গ থেকে শুধু স্ত্রী লিঙ্গেরই জন্ম নেয়। তবে অনেক সময় পার্থেনোজেনেসিস এর মাধ্যমে স্ত্রী পুরুষ উভয় লিঙ্গের বাচ্চাই জন্ম হয়। যেমন পুরুষ কমোডো ড্রাগন এর ক্ষেত্রে ZZ এবং মেয়ে কমোডো ড্রাগন এর ক্ষেত্রে WZ ক্রোমোজম থাকে। দুটো ভিন্ন ক্রোমোজম থাকার কারণে মেয়ে কমোডো ড্রাগন এর ডিম্বে WW এবং ZZ দুটোই থাকতে পারে। তবে দেখা গেছে ZZ কেবল বেঁচে থাকতে পারে। অর্থাৎ, কমোডো ড্রাগন এর ক্ষেত্রে পার্থেনোজেনেসিস শুধুমাত্র ছেলের জন্ম দিতে পারে। এখানে উল্লেখ্য যে কোন প্রজাতির ভিতরে পার্থেনোজেনেসিস বা অযৌণ প্রজনন ও স্বাভাবিক যৌণ প্রজনন এই ২ টাই একসাথে চলে। যখন ঐ ৭০ টি প্রজাতির ভিতরে পুরুষ সঙ্গীর অভাব পরে তখন মেয়ে প্রজাতিরা নিজেরাই পার্থেনোজেনেসিস এর মাধ্যমে বাচ্চা জন্ম দেয়। এটা মুলত প্রতিকূল পরিবেশেও যেন তাদের প্রজাতি গুলি বিলুপ্ত না ঘটে সেই জন্যই আল্লাহ সুবহানাতায়ালা তাদের মাঝে পার্থেনোজেনেসিস এর প্রক্রিয়া টি চালু করে রেখেছেন। উদ্ভিদ জগতের মাঝে পার্থেনোজেনেসিস প্রায়ই ঘটে থাকে। পারথেনোজেনেসিস উদ্ভিদ জগতে একটি অতি সাধারণ ঘটনা এবং উদ্ভিদেই এটি ঘটা তুলনামুলকভাবে অনেক সহজ। উদ্ভিদে বরং এটি প্রানির চেয়ে শতগুণ বেশি ঘটে। আমাদের পরিচিত অনেক উদ্ভিদেই এটি হয়। বীজহীন লেবু, কলা, আনারস এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
মুক্তমনার প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় পার্থেনোজেনেসিস বা অযৌণ প্রজননের সাথে প্রাণিজগতের সমকামিতার উদাহরন টেনে এনেছেন। আচ্ছা আপনারা একটু চিন্তা করে দেখুন এই পার্থেনোজেনেসিস প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার জন্য কি দুটি ভিন্ন নারীর ডিম্বাণু মিলিত হতে হয়? নিশ্চয়ই নয়। পার্থেনোজেনেসিস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য কোন যৌন মিলনেরও প্রয়োজনই হয় না। একটি মায়ের দেহে নিজে নিজেই কোনও প্রকার যৌন মিলন ছাড়া যখন ডিম বা বাচ্চা উৎপন্ন হয় তখনই তো তাকে Parthenogenesis বলা হয়। এবার সবাই আপনারা ভেবে দেখুন, এই পার্থেনোজেনেসিস প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার সাথে সমকামিতার কি সম্পর্ক আছে? পার্থেনোজেনেসিস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য কখনই কোন মহিলা প্রজাতিকে অন্য কোন মহিলা প্রজাতির সাথে মিলিত হতে হয় না। উইকিপিডিয়ায় পার্থেনোজেনেসিস সম্পর্কে নিবন্ধটা হল এই লিংকে http://en.wikipedia.org/wiki/Parthenogenesis পুরা উইকিপিডিয়ায় কোথাও লিখা নাই যে পার্থেনোজেনেসিস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য কোন মহিলা প্রজাতিকে তার আরেক মহিলা প্রজাতির সাথে মিলিত হতে হবে। শুধু উইকিপিডিয়া না প্রাণিবিজ্ঞান বা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ যারা পড়েন তারাও ভালভাবে জানেন যে এই পার্থেনোজেনেসিস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য কখনই কোন মহিলা প্রজাতিকে তার আরেক মহিলা প্রজাতির সাথে মিলিত হতে হয় না এবং তারা কখন যৌণ মিলন করেও না। পার্থেনোজেনেসিস প্রক্রিয়া হল একটা মহিলা প্রজাতির নিজের মাঝেই একটি স্বশাষিত অযৌণ প্রজনন যেই অযৌণ প্রজননের মাঝে কখনই কোন মহিলা প্রজাতির সংস্প্র্শ থাকে না। কিন্তু আমি অবাক হয়ে গেলাম মুক্তমনার প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় উনার “সমকামিতা: একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান” এই বইয়ে কিভাবে
পার্থেনোজেনেসিস প্রক্রিয়ার সাথে সমকামিতাকে মিলিয়ে ফেলেছেন। আর বাংলার আবাল নাস্তিকরা পার্থেনোজেনেসিস সম্পর্কে কোন পড়াশুনা না করেই এই পার্থেনোজেনেসিস প্রক্রিয়াকেই সমকামিতার সাথে গুলিয়ে ফেলেছেন। হুইপটেল গিরগিটির মাঝে পুরুষ প্রজাতি খুব কম থাকে। হুইপটেল গিরগিটির যখন ডিম পাড়ার সময় হয় তখন আরেক হুইপটেল গিরগিটি ঐ মা হতে যাওয়া ঐ হুইপটেল গিরগিটির পেটে একটা চাপ দেয়। ফলে মা হুইপটেল গিরগিটির পেট থেকে খুব সহজেই ডিম গুলি বের হয়ে আসে। অভিজিৎ রায় এই ঘটনার সাথে সমকামিতার সম্পর্ক খুজে পেয়েছেন। আচ্ছা আমাদের যেইসব মায়েদের নরমাল ডেলিভারি হয় তখন নার্সরা বাচ্চা যেন সহজ ভাবে মায়ের পেট থেকে বের হতে পারে সেই জন্য ঐ গর্ভবতী মায়ের পেটে একটা চাপ দেয়। এই গর্ভবতী মায়ের পেটে চাপ দেয়াটাকে মেডিক্যাল সাইন্স এর ভাষায় বলা হয় "bearing down effort" এখন নার্স এই যে গর্ভবতী মায়ের পেটে চাপ দিয়ে সহজ ভাবে বাচ্চাটাকে প্রসব করাল এই ঘটনাটাকে যদি আপনি সমকামিতা বলেন তাইলে আপনি অবশ্যই একটা পাগল। অভিজিৎ রায় ঠিক এই পাগলামিটাই করেছেন হুইপটেল গিরগিটির ব্যাপারে। হুইপটেল গিরগিটির ডিম পাড়ার সময় আরেকটি হুইপটেল গিরগিটি যে তাকে চাপ দিয়ে ডিম পারায় সহায়তা করে তাকেই কিনা অভিজিৎ রায় সমকামিতা বলে ফেলেছেন! আর বাংলার আবাল নাস্তিকরা এই অভিজিৎ রায়ের কথায় এক হুইপটেল গিরগিটি আরেক হুইপটেল গিরগিটির পেটে চাপ দিয়ে ডিম বের করার ঘটনাটিকেই সমকামিতা মনে করে মুক্তমনায় সে কি লাফালাফি !
যেহেতু পার্থেনোজেনেসিস প্রক্রিয়ায় বেশীর ভাগ সময়ে মেয়ে বাচ্চার জন্ম হয় তাই দেখা যায় ঐ মেয়ে বাচ্চা গুলি একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মায়ের সাথে থাকে। আর ঐ মেয়ে বাচ্চা গুলির মাঝে খুব ঘনিষ্ঠতা থাকে। অভিজিৎ রায় এই পার্থেনোজেনেসিস প্রক্রিয়ায় জন্ম নেয়া মেয়ে বাচ্চা গুলির ঘনিষ্ঠতা কে সমকামিতা বলে উল্লেখ করেছেন। তাইলে আমরা ছেলেরা যে হোস্টেলে বা মেসে থাকি তাইলে হোস্টেলে বা মেসে থাকা সকল ছেলেরাই কি সমকামী ? আরে সমকামিতা হল একটি যৌণ প্রজনন। ২ টি স্ত্রী প্রজাতি একসাথে থাকা মানে এই নয় যে তাদের মাঝে সমকামিতা আছে। আমাদের আগে একটা জিনিস বুঝতে হবে যে সমলিঙ্গের একই সাথে সহবস্থান মানেই এই নয় যে তারা সমকামী। তাইলে তো আমরা ছেলেরা যারা হলে বা মেসে থাকি তারা সবাই সমকামী। ২ টা মোরগ একসাথে মোরগ লড়াই করলে বা একই মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়া ২ টা বাঘের শাবকের একসাথে খেলাধূলা কে কেউ যদি সমকামী বলে তাইলে এটা অবশ্যই একটা চরম ভুল হবে। সমকামীতা হচ্ছে সম লিঙ্গের মাঝে যৌণ মিলন যেটা কখনই প্রাণী জগতের ভিতরে দেখা যায় না।
আর যেই সকল স্ত্রী প্রজাতিরা পার্থেনোজেনেসিস প্রক্রিয়ায় বাচ্চা জন্ম দেয় তারা কিন্ত ঠিকই তাদের পুরুষ সঙ্গীদের সাথে যৌণ প্রজনন করে। মুলত যখন ঐ সকল প্রজাতিরা কোন পুরুষ প্রজাতি পায় না তখনই তারা পার্থেনোজেনেসিস প্রক্রিয়ায় বাচ্চা জন্ম দেয়। কিন্তু এই পার্থেনোজেনেসিস প্রক্রিয়ায় বাচ্চা জন্ম দেয়ার জন্য তাদের কখনই কোন মহিলা ডিম্বানুর দরকার হয় না এবং তারা তাদের কোন মহিলা প্রজাতির সাথে মিলনও করে না।
আমরা মুসলমানরা বিশ্বাস করি যে, হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম কোন পিতা ছাড়াই হযরত মরিয়ম আলাইহিস সাল্লামের গর্ভে জন্ম লাভ করেছিলেন। তৎকালীন মানুষের কাছে এটা বিস্ময়কর ঠেকলেও বর্তমানে পার্থেনোজেনেসিস /Parthenogenesis এর মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই একে ব্যখ্যা করতে পারি। মহান আল্লাহ সুবহানাতায়ালা প্রকৃতিতে যে Parthenogenesis এর প্রক্রিয়া টি ছড়িয়ে রেখেছেন সেই অসাধারন বংশবিস্তার পদ্ধতিটিই আমরা দেখতে পাই হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লামের জন্মের ক্ষেত্রে। তবে ভবিষ্যতে যদি ভার্জিন বার্থ নামে কিছু চালুও হয় তবে এই ক্ষেত্রে কোন মেয়ের পক্ষে কোন ছেলে কে জন্ম দেয়া সম্ভব না। কারন একটা মেয়ের শরীরে শুধু XX ক্রমোসম থাকে কিন্তু ছেলেদের শরীরে XY ক্রমোসম থাকে। সেই ক্ষেত্রে একটা মেয়ের গর্ভ থেকে যদি কোন পুরুষের শুক্রানো ছাড়া কখনো একটা সন্তানের জন্মও হয় তাইলে সে ক্ষেত্রে ঐ সন্তানটা হবে মেয়ে কারন ছেলে জন্ম দেবার জন্য যে Y ক্রমোসম দরকার সেটা ঐ ভার্জিন কণ্যাটা কোথা থেকে পাবে ?
তাই মানব জাতির ভিতরে কখনো যদি পার্থেনোজেনেসিস প্রক্রিয়া চালুও হয় তাও কখনই কোন মেয়ের পক্ষে সম্ভব না কোন ছেলে কে জন্ম দেয়া। তাই হযরত মরিয়ম আলাইহিস সাল্লামের গর্ভ থেকে হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লামের জন্ম নেয়াটা অবশ্যই একটা আল্লাহ সুবহানাতায়ালার বিশেষ কুদরত।
বিষয়: বিবিধ
৪৫৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন